রাসুল সা.-এর জন্মের বছর হস্তি বাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হয়। কাবা রক্ষায় আল্লাহ তায়ালা আবরাহার সৈন্য বাহিনী ধ্বংস করেন। কাবাগৃহ, যা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ. মক্কায় পুনঃনির্মাণ করেন। প্রতি বছর আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে হজ্জ পালনে সমবেত হতো। তবে কালের পরিক্রমায় মানুষ আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে মূর্তি পূজায় লিপ্ত হতে লাগল এবং মূর্তিগুলো কাবাগৃহের ভেতরে রাখতে লাগল। কাবার গুরুত্ব,সম্মান ও মর্যাদা আবরদের ঈর্ষার কারণ হয়ে গেলো। কাল পরিক্রমায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শাসক ও নেতৃবর্গদের মনে হিংসা জন্মাতে করতে লাগল।
হস্তি বাহিনীর ঘটনার সূত্রপাত:
আরবদের অন্তরে কাবায় প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার ফলে ইয়ামেনের শাসক আবরাহার অন্তরে হিংসার আগুন জ্বলে উঠল। আবরাহা একটি বড় গির্জা তৈরি করল। সেটি ছিল কাবার তুলনায় অধিক সুন্দর ও বড়। যাকে ‘কুল্লাইস’ বলে ডাকা হতো।
আবরাহার ইচ্ছা ছিল; এর মাধ্যমে সে মানুষকে কাবা থেকে বিমুখ করবে এবং তার বানানো গীর্জার দিকে আগ্রহী করে তুলবে। ফলে মানুষ কাবার পরিবর্তে কুল্লাইসে হজ্জ পালন করবে। আবরগণ সেটির কোনো গুরুত্ব দিলো না। এমনটি সেটি দেখার জন্য কেউ সেখানে যেতো না। ফলে আবরাহা প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হল এবং সৈন্য বাহিনী প্রস্তুত করল। যার অগ্রভাগে ছিল বিশালকায় এক হাতি। সে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৈন্য বাহিনী নিয়ে বের হলো।
যখন আরবের অধিবাসীগণ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারলেন। তখন কতিপয় গোত্র তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে এলো। আরবাহা তাদের সকলকে পরাজিত করল। আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে চলতে লাগল। এমনকি সে মক্কার উঁচুভূমিতে পৌঁছে গেল।
হস্তি বাহিনীর তাণ্ডব
মক্কাবাসীর সম্পদ, উট-বকরীর পাল; যা সামনে পড়েছে তার সৈন্যদল সেগুলো ছিনিয়ে নিল। এমনকি বনু হাশেমের সর্দার, রাসুল সা.-এর সম্মানিত দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ১০০ উট তারা ছিনতাই করে নিয়ে গেলো।
আবরাহা মক্কায় দূত প্রেরণ করল যেন কাবাগৃহের রক্ষক তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। যখন আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার কাছে পৌঁছল। আবরাহা তাকে অভিবাদন জানানো এবং খুবই মূল্যায়ন করতে লাগল। আবরাহা তাকে তার প্রয়োজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। প্রতিউত্তরে আব্দুল মুত্তালিব সৈন্যদের ছিনিয়ে নেওয়া ১০০ উট ফেরত চাইলেন।
আবরাহা অবাক দৃষ্টিতে আব্দুল মুত্তালিবের দিকে আশ্চার্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে বলল: আমি যখন আপনাকে দেখেছিলাম তখন আশ্চার্যান্বিত হয়েছিলাম আর যখন কথা বলছি আপনার কাজ দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। আপনি আপনার ১০০ উটের ব্যাপারে আবেদন জানালেন। অথচ কাবার ব্যাপারে সুপারিশ করলেন না। এটি আপনার এবং আপনার পূর্ব পুরুষদের ধর্ম।
আব্দুল মুত্তালিব বললেন: এই উটগুলো আমার। আর কাবা বিষয়টি ভিন্ন; তার মালিক তাকে রক্ষা করবে। আবরাহা ধমকের সুরে বলল: তার উটগুলো তাকে দিয়ে দাও।
অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলেন। এবং মক্কাবাসীকে মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়ার এবং আশ্রয়ের জন্য নিকটস্থ পাহাড়ে উঠার আদেশ দেন।
হস্তি বাহিনীর ধ্বংসলীলা:
কাবা ধ্বংসের জন্য আবরাহা তার সৈন্য বাহিনীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে সম্মুখে থাকা বিশালকায় হাতিটি বসে পড়ল। কোনো ভাবেই উঠাতে সক্ষম হচ্ছিল না। সৈন্য বাহিনী যখন হাতিকে অন্য দিকে ফেরায়। তখন দ্রুত দাঁড়িয়ে যায়। যখন কাবার দিকে ফেরায় তখন বস পড়ে।
হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল এবং স্থানটি কালো মেঘ ডেকে নিল। মূলত ঐ মেঘটি ছিল ছোট ছোট পাখির বিশাল ঝাঁক। ছোট ছোট পাখিগুলো আল্লাহর আদেশে ছোট ছোট পাথর উপর থেকে আবরাহা ও তার সৈন্য বাহিনীর উপর নিক্ষেপ করতে লাগল। এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের মধ্য যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো; দ্রুত পালিয়ে ইয়ামেনে ফিরে গেল।
আমুল ফিল বা হস্তি বাহিনীর বর্ষ নামে নামকরণ:
যেহেতু এ বছর আল্লাহ তায়ালা কাবাকে হস্তি বাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষা করেছেন। তাই লোকেরা বছরটিকে ‘আমুল ফিল’ বা হস্তী বাহিনীর বর্ষ নামে নামকরণ করেন।