হারেস ইবনে খালেদ, আবু বুরদা, সাকরান ইবনে আমর, ইয়াজিদ ইবনে জামআ, ফিরাস ইবনে নজর রা.-এর জীবনী এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হবে। সোনালি যুগের মহা মানবদের অমর কীর্তি আবহমান কাল ধরে চর্চিত হয়। একদিকে তারা হকের ঝান্ডা উড়িয়েছেন দিক দিগন্তে, কখনো মরুতে আবার কখনো শীতল পরিবেশে। তাই তো তাদের জীবনী জানা আমাদের জন্য কর্তব্য।
সাহাবীদের জীবন পাতা থেকে:
হজরত হারেস ইবনে খালেদ রা.
নাম হারেস। পিতার নাম খালেদ। তার বংশধারা হলো, হারেস ইবনে খালেদ ইবনে সখর ইবনে আমের ইবনে ইবনে কাব ইবনে সাদ ইবনে তাইম ইবনে মুররা।
ইসলামের একেবারে শুরুদিকে তিনি মুসলমান হয়েছেন। আবিসিনিয়ার দ্বিতীয় হিজরতের সময় সস্ত্রীক সেখানে হিজরত করেছেন।
আবিসিনিয়ায় তার চারটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হলো, মুসা, আয়েশা, জাইনাব ও ফাতেমা। আবিসিনিয়া থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের সময় এক স্থানে তিনি পানি পান করেছিলেন; কিন্তু পানি ছিল বিষাক্ত। এর প্রভাবে তার স্ত্রীসহ সকল ছেলে-মেয়ে মারা যায়। তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আল্লাহর রাস্তায় এভাবে পুরো পরিবারকে হারিয়ে ফেলে খালি হাতে মদিনায় আসেন।
তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াজিদ ইবনে হাশেমের গোলামের মেয়ের সাথে তার বিয়ে পড়িয়ে দেন।
হজরত আবু বুরদা রা.
নাম: আনের। উপনাম: আবু বুরদা। তিনি আবু মুসা আশআরি রা.-এর সহোদর ভাই।
ভাইয়ের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং তার সাথে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছেন। সেখানে থেকে মদিনায় এসেছেন। তার মদিনায় আসার পরের অবস্থাদি ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
হজরত সাকরান ইবনে আমর রা.
নাম ও বংশ নাম সাকরান। পিতার নাম আমর। তার বংশধারা হলো, সাকরান ইবনে আমর ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদুদ ইবনে মালেক ইবনে হাসাল ইবনে আমের ইবনে লুয়াই কুরাইশি আমেরি ।
মায়ের নাম হুবাই। মায়ের দিক থেকে বংশধারা হলো, হুবাই বিনতে কায়েস ইবনে দাবিস ইবনে সালাবা ইবনে হিব্বান ইবনে গনাম ইবনে মালিহ ইবনে আমর খুজায়ি ।
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত ইসলামের শুরু লগ্নে মুসলমান হয়েছেন। আবিসিনিয়ার দ্বিতীয় হিজরতের সময় সস্ত্রীক সেখানে হিজরত করেছেন।
মুসা ইবনে উকবার বর্ণনা অনুযায়ী তিনি আবিসিনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় এসেছেন, কিন্তু মদিনায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি; এর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী- সাওদা রা. উম্মুল মুমিনিন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
হজরত ইয়াজিদ ইবনে জামআ রা.
নাম ইয়াজিদ। পিতার নাম জামআ। তার বংশধারা হলো, ইয়াজিদ ইবনে জামআ ইবনে আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উজ্জা কুরাইশি আসামি।
মায়ের নাম কুরাইবা। মায়ের দিক থেকে বংশধারা হলো, কুরাইবা বিনতে আবু উমাইয়া ইবনে মুগিরা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে মাখজুম । ১৯৬০ তার মা কুরাইবা, উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা রা.-এর বোন হয়ে থাকেন। সেই সুবাদে উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা রা. তার খালা হয়ে থাকেন। ইয়াজিদের বংশ জাহেলি যুগ থেকেই আরবের উপদেষ্টা পদে আসীন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ইসলামের একেবারে শুরুদিকে তিনি মুসলমান হয়েছেন। আবিসিনিয়ার দ্বিতীয় হিজরতের সময় সেখানে হিজরত করেছেন।
মদিনায় আসার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সবকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তায়েফযুদ্ধে ঘটনাক্রমে তার ঘোড়া উদ্তান্ত হয়ে দৌড়াতে শুরু করে। ঘোড়ার উপর থেকে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তখন কাফেররা তাকে ধরে শহিদ করে ফেলে। ১১ তার কোনো সন্তান ছিল না।
হজরত ফিরাস ইবনে নজর রা.
নাম ফিরাস। পিতার নাম নজর। তার বংশধারা হলো, ফিরাস ইবনে নজর ইবনে হারেস ইবনে আলকামা ইবনে কালাদা ইবনে আবদে মানাফ ইবনে আবদে দার ইবনে কুসাই ।
মায়ের নাম জাইনাব। মায়ের দিক থেকে বংশধারা হলো, জাইনাব বিনতে নাবাশ ইবনে জুরারাহ আসাদি ইবনে আমর ইবনে তামিম তামিমি। ইসলামের শুরু দিকে মক্কায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবিসিনিয়া হিজরতকারী দ্বিতীয় কাফেলার সাথে সেখানে হিজরত করেছেন।
তার মাদানি জীবনের কোনো অবস্থা জানা যায় না। উমর রা.-এর শাসনামলে শামের রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইয়ারমুকযুদ্ধে শরিক হয়েছেন এবং তাতে শাহাদাতের মর্যাদা হাসিল করেন।
হজরত হাতেব ইবনে হারেস রা.
নাম হাতের। পিতার নাম হারেস। তার বংশধারা হলো, হাতের ইবনে হারেস ইবনে মা’মার ইবনে হাবিব ইবনে ওয়াহাব ইবনে হুজাফা ইবনে জুমাহ । মায়ের নাম কাতিলা। মায়ের দিক থেকে বংশধারা হলো, কাতিলা বিনতে মাজউন ইবনে হাবিব ইবনে ওয়াহাব ইবনে হুজাফা ইবনে জুমাহ । ইসলামের শুরুদিকেই তিনি মুসলমান হয়েছেন। আবিসিনিয়ার দ্বিতীয় হিজরতের সময় সপরিবারে সেখানে হিজরত করেছেন। তার জীবনপ্রদীপ নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই মদিনায় আসার সুযোগ হয়নি। আবিসিনিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানেই চির- শায়িত হয়েছেন। সপ্তম হিজরিতে তার পরিবারের লোকেরা মদিনায় চলে আসেন। মুহাম্মাদ ও হারেস নামে তার দুটি সন্তান ছিল।