আবু রাফের পূর্ন নাম: আবু রাফে আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল হুকায়ক। আবু রাফে একজন ইহুদি ধনী ব্যবসায়ী ছিল। সে খায়বারের নিকটে একটি দূর্গে বসবাস করত। সে রাসুল (সা.) কে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিত। মক্কার মুশরিকদেরকে মুসলামদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লেলিয়ে দেয়। যার ফলে আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ কারণে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।
আবু রাফেকে হত্যা বিবরণ:
যখন আউস গোত্রের সাহাবীগণ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দুশমন কাব বিন আশরাফকে হত্যার মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য অর্জন করল। তখন খাজরাজ গোত্রের সাহাবীগণ পরস্পর বলাবলি করতে লাগত: “আউস গোত্রের লোকজন তো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দুশমন কাব বিন আশরাফকে হত্যার মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য অর্জন করেছে। আমরাও রাসুল (সা.)-এর অপর চরম শত্রু আবু রাফেকে হত্যা মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য অর্জন করব।” তখন তারা রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আবু রাফেকে হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আতীককে আমির বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কপিতয় সাহাবীকে ইয়াহুদী আবু রাফের হত্যার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবু রাফে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদের সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দুর্গ ছিল। সে সেখানে বসবাস করত। তারা যখন তার দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে নিজ নিজ বাড়ীর দিকে রওয়ানা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক তার সাথীদেরকে বললেন: তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাকো।
এরপর তিনি পুরো ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেন যে,
আমি চললাম; ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সাথে আমি কিছু কৌশল প্রদর্শন করব। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলল, হে আব্দুল্লাহ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব।
আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা লটকিয়ে রাখল।
আব্দুল্লাহ ইবনু্ আতীক (রাযি.) বলেন: এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম। আবু রাফের নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো, এ সময় সে তার উপর তলায় কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এসময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার আগমন সম্বন্ধে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম।
এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে পরিবার পরিজনের সাথে মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন্ অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবু রাফে বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম।
আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কিছুই করতে পারলাম না। সে চিৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায় জিজ্ঞাসা করলাম: আবু রাফে! এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল: তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারালো দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। আমি মনে করলাম: সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল, তাই নিচে পা রাখতেই আমি আঁছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। অমনই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল।
তাড়াহুড়া করে আমি আমার মাথার পাগড়ী দ্বারা পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরে উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবু রাফীর মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর।
তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ আবু রাফেকে হত্যা করেছেন। এরপর নবী (সা.) এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা টি লম্বা করে দাও। আমি আমার পা টি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল। যেন তাতে কোন আঘাতই পায়নি।
আবু রাফেকে হত্যার কারণ:
আবু রাফে একজন ইহুদি ধনী ব্যবসায়ী ছিল। সে খায়বারের নিকটে একটি দূর্গে বসবাস করত। সে রাসুল (সা.) কে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিত। মক্কার মুশরিকদেরকে মুসলামদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লেলিয়ে দেয়। যার ফলে আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
যে সকল সাহাবী এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন:
১. আব্দুল্লাহ বিন আতিক (রা.)
২. মাসউন বিন সিনান (রা.)
৩. আব্দুল্লাহ বিন উনায়েস (রা.)
৪. আবু কাতাদা হারিস বিন রিবয়ী (রা.)
৫. খুযায়ী বিন আসওয়াদ (রা.)