ইসলামে মানুষ হত্যার শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। ইসলামে মানুষ হত্যা একটি জঘন্যতম ও ঘৃণিত অপরাধ। কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করা শুধু গুনাহই নয়। বরং এটি বড় বড় গোনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবে উক্ত হত্যা আরো ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হয়, যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয়; যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক। যেমন: নিষ্পাপ শিশু, নিজ মাতা-পিতা, নবী-রাসুল, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী শাসক অথবা উপদেশদাতা আলিমকে হত্যা করা।
বিনা কারণে মানুষ হত্যার ব্যাপারে কুরআন যা বলে
মানুষ হত্যার প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا
‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’’।
(সুরা নিসা : ৯৩)
إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِآيَاتِ اللهِ، وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ، وَيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ أَعْمَالُـهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَا لَـهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইনসাফের আদেশ করে তাদেরকেও। (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না’’।
(আলে ইমরান : ২১-২২)
আল্লাহ তা‘আলা উক্ত হত্যাকারীকে চির জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তিনি তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তেমনিভাবে তার উপর তাঁর অভিশাপ ও আখিরাতে তার জন্য দ্বিগুণ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ، وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَلَا يَزْنُوْنَ، وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهِ مُهَانًا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا، فَأُوْلَآئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّآتِهِمْ حَسَنَاتٍ، وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
‘‘আর যারা আল্লাহ তায়ালার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে, (নতুনভাবে) ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’।
(ফুরকান : ৬৮-৭০)
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِيْ الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًا، وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا
’’উক্ত কারণেই আমি বানী ইসরাইলকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন মানুষ হত্যার বিনিময় অথবা ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টির হেতু ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষ হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’’। (মায়িদাহ: ৩২)
উক্ত হত্যাকাণ্ডকে হাদিসের পরিভাষায় সর্ববৃহৎ গুনাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বিনা কারণে মানুষ হত্যার ব্যাপারে হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ
‘‘সর্ববৃহৎ কবিরা গুনাহ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’। (বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)
নিম্নোক্ত হাদিসগুলোতে হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্করটা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
يَجِيْءُ الْمَقْتُوْلُ بِالْقَاتِلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ؛ نَاصِيَتُهُ وَرَأْسُهُ بِيَدِهِ، وَأَوْدَاجُهُ تَشْخَبُ دَمًا، يَقُوْلُ: يَا رَبِّ! هَذَا قَتَلَنِيْ، حَتَّى يُدْنِيَهُ مِنَ الْعَرْشِ، قَالَ: فَذَكَـرُوْا لِابْنِ عَبَّاسٍ التَّوْبَةَ، فَتَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: «وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا»
قَالَ: مَا نُسِخَتْ هَذِهِ الْآيَةُ، وَلَا بُدِّلَتْ، وَأَنَّى لَهُ التَّوْبَةُ؟
‘‘হত্যা কৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যা কৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে।
সে আল্লাহ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে:
“হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে।
শ্রোতারা ইবনে আব্বাস (রা:) কে উক্ত হত্যাকারীর তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোক্ত সূরা নিসা’র আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন:
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا
‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’’। (নিসা : ৯৩)
উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তওবা কোন কাজেই আসবে না’’। (তিরমিযী ৩০২৯; ইবনে মাজাহ ২৬৭০; নাসায়ী ৪৮৬৬)
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَنْ يَزَالَ الْـمُؤْمِنُ فِيْ فُسْحَةٍ مِّنْ دِيْنِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا.
‘‘মুমিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করে’’। (বুখারী ৬৮৬২)
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ مِنْ وَرَطَاتِ الْأُمُوْرِ الَّتِيْ لَا مَخْرَجَ لِمَنْ أَوْقَعَ نَفْسَهُ فِيْهَا سَفْكُ الدَّمِ الْـحَرَامِ بِغَيْرِ حِلِّهِ.
‘‘এমন ঝামেলা যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর রক্তপাত করা’’। (বুখারী ৬৮৬৩)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ الدِّمَاءِ.
‘‘কিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম ফায়সালা করা হবে রক্তের ব্যাপারে।’’ (বুখারী ৬৫৩৩, মুসলিম ১৬৭৮; ইবনে মাজাহ ২৬৬৪)
আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الْأَرْضِ اشْتَرَكُوْا فِيْ دَمِ مُؤْمِنٍ لَأَكَبَّهُمُ اللهُ فِيْ النَّارِ.
‘‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলে মিলেও কোন মু’মিন হত্যায় অংশ গ্রহণ করে তবুও আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’। (তিরমিযী ১৩৯৮)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
سِبَابُ الْـمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.
‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া আল্লাহ’র অবাধ্যতা এবং তাকে হত্যা করা কুফুরি’’। (বুখারী ৪৮; মুসলিম ৬৪)
জারির বিন আব্দুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تَرْجِعُوْا بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ.
‘‘আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কাফির হয়ে যেও না। পরস্পর হত্যাকাণ্ড করো না’’।
(বুখারী ১২১, ১৭৩৯, ৪৪০৫, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ৬৫, ৬৬, ১৬৭৯)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ.
‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ একজন মুসলিম হত্যা অপেক্ষা’’।
(তিরমিযী ১৩৯৫; নাসায়ী ৩৯৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৬৮)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يُرَحْ رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا.
‘‘যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে হত্যা করলো সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়’’। (বুখারী ৩১৬৬, ৬৯১৪)
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) একদা কাবা শরীফকে সম্বোধন করে বলেন:
مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ! وَالْـمُؤْمِنُ أَعْظَمُ حُرْمَةً عِنْدَ اللهِ مِنْكِ!.
‘‘তুমি কতই না সম্মানী! তুমি কতই না মর্যাদাশীল! তবে একজন মু’মিনের মর্যাদা আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমার চাইতেও বেশি’’।
►► আরো পড়ুন: রাসুল সা.-এর স্ত্রীগণের নামের তালিকা
►► আরো পড়ুন: ইমাম আবু হানিফা রহ. এর হাদিস চর্চা ও অবস্থান
►► আরো পড়ুন: ১০ টি গুণাবলি উত্তম চরিত্রেরে নিদর্শন
হত্যাকারী এবং হত্যাকৃত উভয় ব্যক্তিই জাহান্নামী
আবূ বারকাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِذَا الْتَقَى الْـمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْـمَقْتُوْلُ فِيْ النَّارِ، قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ الله! هَذَا الْقَاتِلُ، فَمَا بَالُ الْـمَقْتُوْلِ؟ قَالَ: إِنَّهُ كَانَ حَرِيْصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ.
‘‘যখন দুজন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সম্মুখীন হয় তখন হত্যাকারী এবং হত্যাকৃত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো: হে আল্লাহ’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! হত্যাকারীর ব্যাপারটি তো বুঝলাম। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির দোষ কি যার কারণে সে জাহান্নামে যাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কারণ, সেও তো নিজ সঙ্গীকে মারার জন্য অত্যন্ত উদ্গ্রীব ছিলো’’। (বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩; মুসলিম ২৮৮৮)
আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীর ক্ষমার আশা খুবই ক্ষীণ
মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللهُ أَنْ يَّغْفِرَهُ إِلاَّ الرَّجُلُ يَمُوْتُ كَافِرًا، أَوِ الرَّجُلُ يَقْتُلُ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا.
‘‘প্রতিটি গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দুটি গুনাহ যা আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোন মুমিনকে হত্যা করলে’’।
(নাসায়ী ৩৯৮৪)
কোন মহিলার গর্ভ ধারণের চার মাস পর দরিদ্রতার ভয়ে তার গর্ভপাত করাও কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করার শামিল।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ.
‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কোন পাপটি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা’’। (বুখারী ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম ৮৬)
শরীয়ত সম্মত তিনটি কারণের কোন একটি কারণে মুসলিম শাসকের জন্য কাউকে হত্যা করা বৈধ
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: النَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالثَّيِّبُ الزَّانِيْ، وَالتَّارِكُ لِدِيْنِهِ، الْـمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ.
‘‘এমন কোন মুসলিমকে হত্যা করা জায়িয নয় যে এ কথা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই এবং আমি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্’র রাসূল। তবে তিনটি কারণের কোন একটি কারণে তাকে হত্যা করা যেতে পারে অথবা হত্যা করা শরীয়ত সম্মত। তা হচ্ছে, সে কাউকে হত্যা করে থাকলে তাকেও হত্যা করা হবে। কোন বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচার করলে। কেউ ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করলে এবং জামায়াত চ্যুত হলে’’।
(বুখারী ৬৮৭৮; মুসলিম ১৬৭৬; আবূ দাউদ ৪৩৫২; তিরমিযী ১৪০২; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৮২; ইব্নু হিববান ৪৪০৮ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ৩৬৪৯২; আহমাদ ৩৬২১, ৪০৬৫)
কেউ কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করলে গুনাহ্’র কিয়দংশ আদম (আঃ) এর প্রথম সন্তান কাবিলের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যাকান্ড চালু করে।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ اَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ.
‘‘কোন মানুষ অত্যাচার বশত: হত্যা হলে তার রক্তের কিয়দংশ আদম (আঃ) এর প্রথম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যা কান্ড চালু করে’’। (বুখারী ৩৩৩৫ ৭৩২১; মুসলিম ১৬৭৭)