মক্কায় মুসলমানদের উপর কাফের-মুশরিকদের জুলুম-নির্যাতন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছিল। অপরদিকে তখন মদিনা ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানরা সেখানে আশ্রয় নিচ্ছিলেন। মদিনার আনসারগণও তাদের উদার ভালোবাসায় মুহাজিরদের ওখানে আশ্রয় দিচ্ছিলেন। তাই আবু বকর রা.-ও মদিনাকে পরবর্তী গন্তব্য সাব্যস্ত করে হিজরতের প্রস্তুতি শুরু করে দেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তড়িঘড়ি করতে নিষেধ করেন। এমনকি এক পর্যায়ে নবীজি সা.-এর মদিনায় হিজরত করেন।
তিনি বলেন, আমি আশাবাদী আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরতের নির্দেশ দেওয়া হবে। আবু বকর সিদ্দিক রা. বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন: “আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনাকেও হিজরতের নির্দেশ দেওয়া হবে?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হ্যাঁ।
আবু বকর সিদ্দিক রা. জিজ্ঞেস করেন: “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কি তবে আপনার সঙ্গলাভের সৌভাগ্য হবে?” তিনি বলেন: হ্যাঁ! তুমিও আমার সঙ্গে যাবে।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন: নবীজি সা. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা আবু বকর রা.-এর ঘরে আসতেন। একদিন অভ্যাসের বিপরীতে গোপনে আমাদের ঘরে আসেন। এসে আবু বকর রা.-কে বলেন: কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে, ঘরে কেউ থাকলে দূরে সরিয়ে দাও।
আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেন: ঘরের লোকজন ছাড়া অন্য কেউ নেই। কথাটি শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভেতরে প্রবেশ করে বলেন: আমাকে হিজরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবু বকর সিদ্দিক রা. এবারও রাসুল সা.-এর সাথে হিজরত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেন: তৈরি হও ।
আবু বকর সিদ্দিক রা. আগে থেকেই হিজরতের অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। রাসুল সা.-এর সম্মতি পাওয়া মাত্রই কাল বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ তৈরি হয়ে যান। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. ও তার বোন আসমা রা. অতিদ্রুত সফরের সামানা প্রস্তুত করে দেন। পাথেয়ের থলে বাঁধার জন্য আসমা কিছু না পেয়ে নিজ কটিবন্ধ কেটে সেটা দিয়ে থলে বাঁধেন। এর ফলে তিনি ‘জাতুন নিতাকাইন’ উপাধিতে ভূষিত হন।
সিদ্দিকে আকবার রা. পূর্ব থেকেই দুটি উট প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তিনি একটি রাসুলের খেদমতে পেশ করেন। অপরটিতে তিনি নিজে আরোহণ করেন। এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. প্রথম গন্তব্য অভিমুখে বেরিয়ে পড়েন।
নবীজি সা.-এর মদিনায় হিজরত
ছোট্ট এই কাফেলার প্রথম গন্তব্য ছিল সাওর। আবু বকর রা. প্রথমে গুহায় ঢুকে পর্যবেক্ষণ করে নেন। ছিদ্রগুলো বন্ধ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভেতরে আসার আবেদন করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুহায় প্রবেশ করে প্রিয়তম বন্ধুর উরুতে মাথা রেখে আরাম করতে থাকেন।
ঘটনাক্রমে গুহার একটি ছিদ্র বন্ধ ছিল না। সেই ছিদ্র দিয়ে হঠাৎ বিষাক্ত সাপের মাথা বের করতে দেখা যায়। উৎসর্গ প্রাণ খাদেম আবু বকর সিদ্দিক রা. রাসুলের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটাতে চাচ্ছিলেন না। ফলে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে গর্তের মুখে পা রেখে দেন। সাপটি তাকে দংশন করে। যন্ত্রণায় চোখ ফেটে অশ্রু বইতে থাকে। কিন্তু প্রিয়তমের ঘুম ভেঙে যাক, তা সইতে পারেননি তিনি। সর্বংসহা হয়ে দাঁত কামড়ে স্থির থাকেন।
হঠাৎ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক চেহারায়। রাসুল সা. জেগে ওঠেন। প্রিয়তম বন্ধুকে ব্যথাকাতর দেখে জিজ্ঞেস করেন: কী হয়েছে আবু বকর? তিনি বলেন, আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, একটি সাপ দংশন করেছে। নবীজি তখন দংশিত স্থানে মুখের লালা লাগিয়ে দেন। ফলে বিষক্রিয়া দূর হয়ে যায়।
সাওর পর্বতে দিনকাল:
আবু বকর রা. ছেলে আবদুল্লাহকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি যেন তাদের চলে আসার পর মক্কায় কী ঘটে না ঘটে, রাতে এসে সেই সম্পর্কে অবগত করে যান। এ ছাড়াও গোলাম আমের ইবনে ফুহায়রাকে বলেছিলেন, দিনে মক্কার চারণভূমিতে বকরি চরাবে আর রাতে সেগুলো গুহার পাশে নিয়ে আসবে। উদ্দেশ্য ছিল, আবদুল্লাহ সংবাদ পৌঁছিয়ে ফিরে যাওয়ার পর আমের বকরিগুলোর মাধ্যমে তার পদচিহ্ন মিটিয়ে দেবে। যাতে কেউ কোনো সন্দেহ করতে না পারে। তাছাড়া রাতে তারা বকরির তাজা দুধ পান করতেন। তিন দিন, তিন রাত এ অবস্থা চলমান থাকে। কাজগুলো এত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছিল যে, কুরাইশরা একটুও সন্দেহ করতে পারেনি।
এদিকে কুরাইশরাও খালি হাতে বসে ছিল না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরতের দিন তারা সর্বোচ্চ বৈঠক ডেকে তাকে হত্যার ঘোষণা দিয়ে দেয়। তাদের চত্রান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একদল যুবক রাতভর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর ঘেরাও করে রাখে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রাসুলের ঘরে প্রবেশ করলে রাসুল সা.-এর স্থানে আলী রা. কে দেখতে পান।। সেখান থেকে তারা আবু বকর রা.-এর বাড়িতে চলে আসে। আবু বকর-তনয়া আসমা রা.-কে তার পিতার কথা জিজ্ঞেস করে । তিনি কিছু জানেন না বললে উত্তেজিত আবু জাহেল তাকে সজোরে থাপ্পড় মারে।
মক্কার কাফেররা নিশ্চিত হয়ে যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. উভয়ে একসঙ্গে কোথাও রওনা হয়ে গেছেন। কুরাইশরা ব্যর্থ হয়ে রাগে ফেটে পড়ে। তারা ঘোষণা দেয়, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.) কে ধরে নিয়ে আসতে পারবে, তাকে ১০০ উট পুরস্কার দেওয়া হবে।
পুরস্কারের মোহে বহু বীর-বাহাদুর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে। তারা মক্কার সকল জনপদ, অলি-গলি, বিরাণ ভূমি, পাহাড়-পর্বতে রাসুল সা. ও আবু বকর সা. কে অনুসন্ধান করতে থাকে।
এভাবে একটি অনুসন্ধানী দল গুহার পাশে চলে আসে। তা দেখে আবু বকর রা. অস্থির হয়ে উঠেন। তিনি বিচলিত হয়ে বলেন, তারা যদি নিচের দিকে সামান্যতম দৃষ্টি দেয়, তাহলে তো আমাদেরকে দেখে ফেলবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: চিন্তিত হয়ো না, আমরা কেবল দুজন নই । আল্লাহ তায়ালাও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।
এ সান্ত্বনামূলক বাণী শুনে আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর অন্তর প্রশান্ত হয়। আল্লাহর কুদরত! কাফেররা হন্য হয়ে খুঁজতে খুঁজতে সাওর পর্বতের গুহায় এসে উপনীত হলেও অনুমান করতে পারেনি, এখানেই পরম প্রশান্তিতে বসে রয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিতজন। ফলে তারা ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে যায়।
মদিনার পথে…
চতুর্থ দিন কাফেলা সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। আবু বকর রা. তার গোলাম আমের ইবনে ফুহায়রাকে পথে খেদমতের জন্য পেছনে বসিয়ে নেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে উরাইকিত তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সিদ্দিকে আকবার রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিরাপত্তার চিন্তায় কখনও আগে আগে চলতেন, আবার কখনও পেছনে পেছনে চলতেন।
এরই মধ্যে সুরাকা ইবনে মালেক রাসুল সা.-এর অবস্থানস্থল সম্পর্কে অবগত একটি দ্রুতগামী ঘোড়া হাঁকিয়ে নিকটে পৌঁছে যান । আবু বকর রা. তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! অশ্বারোহী তো নিকটে চলে এসেছে।’ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেন। ফলে সুরাকার ঘোড়ার পা মাটিতে আটকে যায়। সে তখন তির বের করে ভাগ্য যাচাই করে। ভাগ্যতিরের পক্ষ থেকে উত্তর আসে, পশ্চাদ্ধাবন ছেড়ে দাও। কিন্তু সে পুনরায় এগিয়ে যেতে থাকলে আবারও সেই ঘটনার শিকার হয়। পরিশেষে বাধ্য হয়ে রাসুল সা.-এর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ফিরে যায়।
আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর বন্ধুবান্ধব ছিল অনেক। পথে এমন অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যারা তাকে চিনলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনত না। তারা জিজ্ঞেস করত: আবু বকর, সঙ্গে তিনি কে? তিনি তখন কিছুটা ঘুরিয়ে বলতেন: তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক।
রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাহাবীদের জীবনী জানতে প্রায় শতাধিক সাহাবী রা.-এর জীবনী সম্বলিত সাহাবী বিভাগে ভিজিট করুন।
আল্লাহর রাহে উৎসর্গ কাফেলাটি আপন পথে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে নবুওয়াতের চতুর্দশ বছর রবিউল আউয়াল মাসে মদিনার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়।
আনসারগণ আগে থেকেই নবীজির মদিনায় আগমন সংবাদ জানতেন। তারা রাসুল সা.-এর আগমনের জন্য দীর্ঘদিন যাবত অপেক্ষা করছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরের নিকটবর্তী হলে তারা অভ্যর্থনা জানিয়ে কুবায় নিয়ে যায় । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডান দিকে মোড় নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বনু আমর ইবনে আউফের বাড়িতে অবস্থান করেন।
নবীজি সা. তখন নিশ্চুপ বসা ছিলেন আর আবু বকর দাঁড়িয়ে লোকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন। অনেক আনসারি সাহাবি, যারা ইতিপূর্বে রাসুলুল্লাহকে দেখেনি তারা ভুলক্রমে আবু বকর রা.-এর আশপাশে ভিড় জমাচ্ছিলেন । এক সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সূর্যের আলো পড়া শুরু করে। আবু বকর রা. তখন অগ্রসর হয়ে আপন চাদর দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছায়াদান করতে থাকেন।
তখন লোকজন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জড়ো হতে থাকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুদিন কুবায় অবস্থান করে মদিনা এসে আবু আইয়ুব আনসারি রা.-এর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। আবু বকর সিদ্দিকও তার সঙ্গে আসেন এবং তিনি খারিজা ইবনে জায়েদ ইবনে আবু জুহাইর রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। কিছুদিন পর তার পরিবার-পরিজনও তালহা রা.-এর সঙ্গে মদিনায় চলে আসেন।
হিজরতের পর মদিনার আবহাওয়া
মদিনার আবহাওয়া মুহাজিরদের প্রতিকূল ছিল। বিশেষত আবু বকর রা. জ্বরে আক্রান্ত হন। একপর্যায়ে জীবনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েন। তখন আয়েশা সিদ্দিকা রা. তাকে অবস্থা জিজ্ঞেস করলে তিনি আবৃত্তি করেন,
كل امرئ مصبح في أهله * والموت أدنى من شراك نعله
“প্রত্যেকে নিজ পরিবার-পরিজনদের মধ্যে এমন অবস্থায় দিন যাপন করে যে, জুতার ফিতার চেয়েও মৃত্যু তার নিকটে অবস্থান করে ।”
আয়েশা রা. তখন রাসুলের দরবারে উপস্থিত হয়ে আবু বকর রা.-এর অবস্থা তুলে ধরেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হাত উঠিয়ে দোয়া করেন,
اللهم حبب إلينا المدينة كحبنا مكة أو أشد ، وصححها وبارك لنا في صاعها ومدها وانقل حماها فاجعلها بالجحفة
“হে আল্লাহ! মক্কার মতো কিংবা তারও বেশি আমাদের অন্তরে মদিনার ভালোবাসার জন্ম দিন। মদিনাকে রোগ-ব্যাধি থেকে পবিত্র করে দিন। এর সা’ ও মুদে বরকত দিন। জ্বরকে জুহফায় স্থানান্তরিত করুন।”
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কবুল হয়। আবু বকর রা. রোগশয্যা থেকে উঠে দাঁড়ান। মক্কার পরিবেশ মুহাজিরদের জন্য মদিনার চেয়েও অনুকূল হয়ে যায়।
মুসলমানদের পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধন:
মদিনা পৌঁছার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের মাঝে পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধন তৈরি করে দেন। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সম্মানের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়। খারিজা ইবনে জুহাইর রা. ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সঙ্গে সিদ্দিকে আকবার রা.-এর ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেওয়া হয়।
মদিনায় মসজিদ নির্মাণ:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর হিজরতের পর মদিনা হয়ে উঠে মুসলমানদের স্বাধীন আবাসভূমি। যে তাওহিদের ধারক বাহক কাফেরদের ভয়ে এদিক-সেদিক বিক্ষিপ্ত ছিল, তারা ধীরে ধীরে এই কেন্দ্রে এসে জড়ো হতে থাকে। এবার তারা পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর ইবাদতের সুযোগ পেয়ে যায়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত করেন। এজন্য একটি জায়গা নির্বাচন করা হয়। জায়গাটি ছিল সাহল এবং সুহাইল নামক দুই এতিম বালকের মালিকানাধীন। তাদের নিকটাত্মীয়রা জায়গাটি বিনা মূল্যে গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু তিনি তো ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’। তাই বিনা মূল্যে এতিমদের সম্পদ নিতে চাননি। তিনি আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর মাধ্যমে এর মূল্য পরিশোধ করেন।
এভাবে মদিনায় হিজরতের সিদ্দিকে আকবার রা.-এর বদান্যতার বৃষ্টিই ইসলামকে তৃপ্ত করে। প্রৌঢ়ত্বের দুর্বলতা কালেও তিনি যুবকদের মতোই মসজিদ নির্মাণের কাজে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ করেন।