১০ম হিজরীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. প্রায় ১ লক্ষ সাহাবী সাথে নিয়ে হজ্জ পালনে বের হন। সকলের মুখে একই বাক্য: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ।’ এটিই ছিল রাসুল সা.-এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজ্জ; যাকে বিদায় হজ্জ নামে নামকরণ করা হয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. হজ্জের দিন আরাফাত ময়দানে খুতবা দেন; যা বিদায় হজ্জের খুতবা হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাতে তিনি কিতাবুল্লাহ আঁকড়ে রাখা; সুন্নতের অনুসরণ; হালাল-হারামের বিবরণ; মহিলা, গোলাম ও অন্যান্যদের ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি? লোকেরা বলল: আপনি যথার্থভাবে পৌঁছিয়েছেন।
তিনি বললেন: হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতটি নাজিল করেন:
اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الاسلام دينا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
হযরত ওমর রা. এই আয়াত শুনে কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল: হে ওমর! তুমি কেন কাঁদছো? তিনি বললেন: প্রত্যেক পরিপূর্ণতার পর কমতি ব্যতীত কিছুই আছে না।
এরপর ইসলাম ঘোষণা করার জন্য লাগাতার প্রতিনিধিদল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর নিকট আগমন করতে লাগলো।
নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলো:
বিদায় হজ্জ শেষে নবীজি সা. মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পর জান্নাতুল বাকী জিয়ারত করেন এবং সেখানে শায়িত মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যেমনিভাবে তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদদের কবর জিয়ারত করেন। যেন তিনি তাদের থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
এরপর তিনি মদিনায় ফিরে আসেন। মদিনায় ফিরে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যখন অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করল। তিনি তার স্ত্রীদের থেকে অনুমতি নিয়ে হযরত আয়েশা রা.-এর গৃহে অবস্থান করতে থাকেন।
মৃত্যুর পূর্বে একদিন নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। সাহাবায়ে কেরাম তখন নামাজরত ছিলেন। রাসুল সা.-এর হঠাৎ আগমন দেখে তারা প্রচণ্ড আনন্দিত হন। তারা পরস্পরে বলতে লাগলেন: রাসুল সা. সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
অতঃপর নবীজি সা. আয়েশা রা.-এর ঘরে ফিরে যান। তিনি অনুভব করলেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর মাথা ভারি হয়ে যাচ্ছে। তিনি তাঁর চোখের দিকে তাকান; দেখেন তার চোখ নড়ছে না।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বরং মহান বন্ধুর সংস্পর্শ:
হযরত আয়েশা রা. মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-কে ‘জান্নাতে প্রিয় মহান বন্ধুর সংস্পর্শ..’ বলতে শুনেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন: আপনাকে ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আপনি তা নির্বাচন করেছেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. তার প্রতিপালকের আশ্রয়ে চলে যান। তাঁর সর্বশেষ কথা ছিল: “নামাজ…, তোমাদের অধীনস্থদের খেয়াল রেখ।”
রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ ৬৩ বছর বয়সে তিনি দুনিয়া ত্যাগ করেন।
আল্লাহ তায়ালা তার উম্মতের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন, ইয়া রব্বার আলামীন।