যুদ্ধের আয়াত নাজির হওয়ার পর মুসলমানদের উপর তা ফরজ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) কোন কোন যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন আবার কোন কোন যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন না। বরং সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করতেন। তাই রাসুল (সা.)-এর যুগে কুফফারদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। ১. গাজওয়া। ২. সারিয়া
গাজওয়া ও সারিয়ার মাঝে পার্থক্য:
গাজওয়া কাকে বলে?
গাজওয়া বলা হয়, যে যুদ্ধে রাসুল (সা.) সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। চাই যুদ্ধ সংঘটিত হোক বা না হোক।
সারিয়া কাকে বলে?
সারিয়া বলা হয়, যে যুদ্ধে রাসুল (সা.) সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। বরং তিনি সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেছেন। চাই যুদ্ধ সংঘটিত হোক বা না হোক।
গাজওয়া ও সারিয়ার মোট সংখ্যা:
রাসুল (সা.)-এর যুগে সংঘটিত যুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। মতানৈক্যের কারণ হচ্ছে: কখনো কখনো একই সফরে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হত। কেউ কেউ এগুলো একত্রে ভাবে গণনা করে। আবার কেউ কেউ আলাদা ভাবে গণনা করেন। যার ফলে, গাজওয়া ও সারিয়ার সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা দেয়। যেমন: মক্কা বিজয়ের সময় তায়েফ, হুনাইন ও আউতাস যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কেউ কেউ এগুলো একত্রে ভাবে গণনা করে। আবার কেউ কেউ আলাদা ভাবে গণনা করেন। ফলে গাজওয়া ও সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।
গাজওয়ার সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য:
১. ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রহ. এর মতে, ২৭টি।
২. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রহ. এর মতে, ২৫টি।
৩. জাবের রা. এর মতে, ২১টি।
৪. যায়েদ বিন আরকাম রা. এর মতে ১৯টি।
গাজওয়ার সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য:
১. ইবনুল বার রহ. এর মতে, ৩৫টি।
২. ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রহ. এর মতে, ৩৮টি।
৩. ইবনুল জাওযী (রহ.) এর মতে, ৫৬টি।
►► আরো দেখুন: বাংলা ইসলামিক স্ট্যাটাস ও সেরা উক্তি
►► আরো দেখুন: আহযাব (খন্দক ) ও বনু কুরাইজা যুদ্ধ এবং হুদাইবিয়ার সন্ধি
►► আরো দেখুন: বদর ও বনু কায়নুকার যুদ্ধের ইতিহাস
►► আরো দেখুন:উহুদ, বনু নাযীর ও দুমাতুল জান্দাল যুদ্ধ ও ফলাফল
►► আরো দেখুন:সিফুল বাহার যুদ্ধ; আবওয়া, বুয়াত এবং উশায়রা অভিযান
হাদিস
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، كُنْتُ إِلَى جَنْبِ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، فَقِيلَ لَهُ كَمْ غَزَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَزْوَةٍ قَالَ تِسْعَ عَشْرَةَ. قِيلَ كَمْ غَزَوْتَ أَنْتَ مَعَهُ قَالَ سَبْعَ عَشْرَةَ. قُلْتُ فَأَيُّهُمْ كَانَتْ أَوَّلَ قَالَ الْعُسَيْرَةُ أَوِ الْعُشَيْرُ. فَذَكَرْتُ لِقَتَادَةَ فَقَالَ الْعُشَيْرُ.
হযরত আবু ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়েদ ইবনে আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, নবী (ﷺ) কয়টি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল আপনি তাঁর সাথে কতটি যুদ্ধে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরটি। (আবু ইসহাক বলেন) আমি বললাম, এসব যুদ্ধের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল কোনটি? তিনি বললেন, উশায়রা বা উসায়রা। (বর্ণনাকারী বলেন) বিষয়টি আমি কাতাদা (রাহঃ)–এর কাছে আলোচনা করলে তিনিও বললেন, উশায়রা।
প্রথম যুদ্ধ কোনটি?
মূলত সর্বপ্রথম আবওয়া গাজওয়া সংঘটিত হয়।
হযরত যায়েদ (রা.) এর রেওয়ায়েত দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রথম যুদ্ধ হল: الْعُشَيْرَةِ আর কাতাদা (রা.) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কেবল শব্দটি সংশোধন করে দেন। যার ফলে, ধারণা হলে পারে যে, রাসুল সা. এর জীবনে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ الْعُشَيْرَةِ । তবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং এখানে ইবারত মাহযুফ রযেছে।
মূল ইরাবত হল: أَوَّلُ مَا غزوة غزاها و انت معه অর্থাৎ, আপনি রাসুল (সা.) এর সাথে সর্ব প্রথম কোন যুদ্ধ করেছেন। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, রাসুল সা. সর্বপ্রথম কোনো যুদ্ধ করেছেন।
যেহেতু, الْعُشَيْرَةِ যুদ্ধ ছিল বদর যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ। তাই তিনি এখানে সর্ব প্রথম الْعُشَيْرَةِ এর কথা উল্লেখ করেন।
গাযওয়াতে আবওয়া বা ওদ্দান এর বিবরণ:
২য় হিজরীর সফর মাসে কুরাইশদের শাম অভিমুখী বাণিজ্যিক কাফেলাকে প্রতিরোধ করার জন্য রাসুল সা. ৬০ জন সাহাবী নিয়ে রওনা হন। তিনি আবওয়া নামক স্থানে পৌঁছার পর জানতে পারেন যে, কুরাইশদের কাফেলা অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। রাসুল সা. সেখানে ১৫ দিন অবস্থান করে কোনো প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই মদিনাতে ফিরে আসেন।
আবওয়া কোথায় অবস্থিত
আবওয়া হচ্ছে মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী, তবে মদিনা থেকে নিকটবর্তী ইয়ানবুয়া এক কাছাকাছি প্রসিদ্ধ একটি জনপদের নাম।