কাব বিন আশরাফ বনু কুরাইজা গোত্রের একজন ইহুদি এবং কবি ছিল। সে রাসুল (সা.) এর শানে অমার্জিত কথাবার্তা, কবিতা রচনা করত। মুসলিম নারীদের উত্ত্যক্ত করত এবং মক্কার কুরাইশদেরকে রাসুল (সা.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য লেলিয়ে দেয়। তাছাড়া সে রাসুল (সা.) কে হত্যা করার জন্য ইহুদিদের সাথে গোপন বৈঠকও করে। ফলে সে শাতিমে রাসুলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ সকল কারণে রাসুল (সা.) কাব বিন আশরাফকে হত্যার নির্দেশ দেন।
কাব বিন আশরাফকে হত্যা
একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কাব বিন আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছ কে? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) দাঁড়ালেন, এবং বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান যে আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযি.) কাব বিন আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ (সা.)) আমাদের কাছে সাদকা চায়। এবং আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি।
কাব বিন আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ট করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) বললেন, আমরা তো তাঁকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই।
কাব বিন আশরাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযি.) বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযি.) বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কি করে, আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ।
তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটাতো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হল অস্ত্রশস্ত্র।
অবশেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) তাকে (কাব বিন আশরাফকে) পুনরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব বিন আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে।
কাবের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব বিন আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিৎ। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তি নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ‘আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি আরো দু’জন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কাব বিন আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবু আবস ইবনে জাব্র হারীস ইবনে আওস এবং আব্বাদ ইবনে বিশ্র। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার চুল ধরে শুঁকতে থাকব।
যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারী দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কাব) চাঁদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল।
তখন মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। কাব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধি ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযি.) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল: হ্যাঁ এরপর তিনি মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী (সা.) এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন।
কাব বিন আশরাফকে হত্যার কারণ:
নিন্মোক্ত কারণে কাব বিন আশরাফকে হত্যা করা হয়।
১. রাসুল (সা.) এর শানে অমার্জিত কথাবার্তা বলত।
২. রাসুল (সা.) এর শানে খারাপ কবিতা বলে বেড়াতো।
৩. মুসলিম নারীদের উত্ত্যক্ত করত।
৪. মক্কার কুরাইশদেরকে রাসুল (সা.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য লেলিয়ে দেওয়া।
কাব বিন আশরাফকে হত্যাকারীদের নাম:
হযরত মুহাম্মদ বিন সালামা (রা.) আউস গোত্রের আরো ৪ জন সাহাবী নিয়ে এ অভিযানটি পরিচালনা করেন। তারা হলেন:
১. সিলকান বিন সালামা (রা.)। তিনি আবু নায়েলা নামে প্রসিদ্ধ।
২. আব্বাদ বিন বিশর (রা.)
৩. হারেস বিন আউস (রা.)
৪. আবু আবস বিন জাবর (রা.)
উক্ত ঘটনার দ্বারা শাতিমে রাসুলের শাস্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।