খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. (৫৮৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন রাসুল সা.-এর বিশিষ্ট একজন সাহাবী, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং ইসলামের অগ্রদূত ও প্রাণ উৎসর্গকারী। ইসলামি শাসন ভূমির বিস্তৃতি তার খেলাফতের আমলের পূর্ণতা লাভ করে। শাম, বাইতুল মাকদিস তারই তার শাসনামলেই মুসনমালদের আয়ত্তে আসে।
নাম ও বংশ:
নাম: উমর। উপনাম: আবু হাফস। উপাধি: ফারুক। পিতার নাম: খাত্তাব। মায়ের নাম: হান্তামা। পূর্ণ বংশ হলো: উমর ইবনে খাত্তাব ইবনে নুফাইল ইবনে আবদুল উজ্জা ইবনে রিয়াহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুরত ইবনে রাজ্জাহ ইবনে আদি ইবনে কাব ইবনে লুআই ইবনে গালিব আল-কুরাইশি। আদির অপর ভাই মুররা । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন মুররার বংশধর। এখানে এসে অষ্টম পুরুষে উমর রা.-এর বংশ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের সঙ্গে মিলে যায়।
জাহেলি যুগ থেকে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর পরিবার ছিল অত্যন্ত সম্মানিত। তার পূর্ব পুরুষগণ আদি আরবের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে কুরাইশের মধ্যস্থতা করতেন। বিভিন্ন গোত্রে বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরিত হতেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের পরিবারে এই দায়িত্ব বহাল থাকে। তাঁর পিতামহের বংশের মতো ওমরের নানা বংশও অত্যন্ত সম্মানিত ছিল। তার মা ছিলেন হান্তামা বিনতে হাশিম বিন মুগীরাহ। কুরাইশরা কোনো গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধে গেলে সেনাবাহিনীর দেখভালের দায়িত্ব ছিল তাদেরই।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবনে উপনীত হলে তিনি আরবদের অভিজাত বিষয়াদিতে যুক্ত হন। অর্থাৎ বংশ, জ্ঞান, বীরত্ব, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং বাগ্মীতার যোগ্যতা অর্জন করেন। বিশেষ করে যেহেতু তিনি অশ্বারোহণে পারদর্শী ছিলেন। প্রাক-ইসলামী যুগে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক কম। মক্কার খুব কম লোকই লেখালেখিতে পারদর্শী ছিল। হযরত উমর বিন খাত্তাব রা. লেখালেখিতে ভালো পারদর্শী ছিলেন।
শিক্ষাদীক্ষা অর্জনের পর তিনি জীবিকা নির্বাহের দিকে মনোনিবেশ করেন। আরবের অধিকাংশ লোক ব্যবসার পেশায় জড়িত। এ কারণে তিনিও ব্যবসার পথ বেছে নেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি বহু দূরবর্তী দেশ সফর করেন এবং বহুমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও বিষয়াদি অনুধাবনের অধিকারী ছিলেন। এ জন্য কুরাইশরা তাকে দূতের দায়িত্ব প্রদান করে। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সমস্যা ও সংকট দেখা দিলে তিনি দূত হিসেবে অসাধারণ দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করতেন।
তার বয়স যখন ২৭ বছর, তখন আরব ভূখণ্ডে ইসলামের সূর্য উদিত হয়। মক্কা থেকে তাওহিদের ধ্বনি উচ্চারিত হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর কাছে ইসলাম ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত। কেননা তিনি মূর্তি পূজার পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। একত্ববাদ পুরো মক্কাবাসীর কাছে ছিল নতুন বিষয়।
তিনি একত্ববাদের আওয়াজে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এমনকি কেউ মুসলমান হয়েছে জানলে তিনি তার শত্রু হয়ে যেতেন। তার পরিবারের বাসিনা নামক এক বাঁদি মুসলমান হয়ে গেলে তিনি তাকে এত প্রহার করতেন যে, প্রহার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন।
বাসিনা রা. ছাড়াও আরও যে সকল মানুষের উপর তিনি কর্তৃত্ব খাটাতে পারতেন, তাদের কেউ মুসলমান হওয়ার সংবাদ পেলে উমর রা. তাদের উপরও নির্যাতন চালাতেন। কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের আগ্রহ ছিল অপ্রতিরোধ্য। কোনো নির্যাতনই একটি মানুষকেও ইসলাম থেকে ফেরাতে পারেনি।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর ইসলাম গ্রহণ:
কুরাইশের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আবু জাহেল ও উমরই ইসলাম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে প্রধানতম ভূমিকা পালন করতেন। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে তাদের উভয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন,
اللهم أعزّ الإسلام بأحب هذين الرجلين إليك بأبي جهل أو بعمر بن الخطاب
“হে আল্লাহ! আবু জাহেল ও উমর ইবনে খাত্তাবের মধ্যে যে আপনার কাছে বেশি প্রিয়, তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন।”
[জামে তিরমিজি: ৩৬৮১]
মহান আল্লাহ উমর রা.-এর ভাগ্যে এই সৌভাগ্য লিখেছিলেন। এই দোয়ার ফলে এক সময় পর সে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু, ইসলামের সবচেয়ে বড় বন্ধু এবং নিজের জীবন উৎসর্গকারী হয়ে গেল। হযরত উমর রা. ইসলাম গ্রহণ করলেন। হেদায়াতের পথে ফিরে আসা তো আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে চান কেবল তাকেই তা দান করেন।
একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা, যা সিরাতের সকল লেখকগণই লিপিবদ্ধ করে থাকেন। ঘটনাটি হলো: উমর রা. কঠোর নিপীড়ন সত্ত্বেও, তিনি ইসলাম থেকে কাউকে ধর্মান্তরিত করতে ব্যর্থ হন এবং নবী সা. কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কোমরে তলোয়ার ঝুলিয়ে সোজা নবী সা.-এর দিকে যেতে লাগলেন। পথে নাঈম বিন আবদুল্লাহ রা.-এর সাথে তার দেখা হয়। উমরকে উত্তেজিত দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ভালো আছো? উমর রা. তিনি বললেন: আমি মুহাম্মদের ফায়সালা করছি।
নুয়াইম বললেন, আগে তো নিজ ঘরের খবর নেও। তোমার বোন এবং ভগ্নিপতিই তো ইসলাম গ্রহণ করেছে। উমর তৎক্ষণাৎ বোনের ঘরের দিকে রওনা হোন। উমর রা.-এর বোন উমর রা.-এর পায়ের আওয়াজ পেয়ে তেলাওয়াত বন্ধ করে কুরআনের পৃষ্ঠাগুলো লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু উমর কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ পেয়েছিলেন।
বোনকে জিজ্ঞেস করেন, কী করছিলে? বোন বলল, কিছুই না। তিনি বলেন, শুনতে পেলাম তোমরা নাকি ধর্মত্যাগী হয়ে গেছ। এ কথাটা বলেই তিনি ভগ্নিপতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বোন বাঁচাতে এলে উমর তাকেও প্রহার শুরু করেন। এমনকি তার শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। কিন্তু নির্যাতন তাদেরকে ইসলাম থেকে সামান্যতম ফেরাতে পারেনি । বোন বলল, উমর! যা ইচ্ছে করতে পারো। কিন্তু অন্তর থেকে ইসলাম বের করতে পারবে না। এ বাক্যটি উমরের মনে গভীর রেখাপাত করে। বোনের দিকে তিনি মমতার দৃষ্টিতে তাকান। দেখতে পান তার দেহ থেকে রক্ত ঝরছে। এটা দেখে তার হৃদয় বিচলিত হয়ে উঠে। বলেন, কী পড়ছিলে সেটা আমাকে একটু শোনাও ।
তার বোন ফাতেমা রা. কুরআনের অংশগুলো সামনে এনে রাখেন। তিনি হাতে উঠিয়ে দেখেন তাতে নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লেখা রয়েছে,
سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوتِ وَ الْأَرْضِ وَ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ: ‘আসমান-জমিনের সবকিছু আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ পাঠ করে। আর তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’
কুরআনের প্রতিটি শব্দ তার অন্তরকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল । তিনি তেলাওয়াত করে যাচ্ছিলেন। তেলাওয়াত করতে করতে নিম্নোক্ত আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন, آمنوا بالله ورسوله ‘ তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান নিয়ে এসো।’
তখন উমর আপনা থেকেই বলে উঠেন,
أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।’
তখন প্রিয় নবী সা. সাফা পাহাড়ের নিচে আরকাম রা.-এর বাড়িতে অবস্থান করতেন। উমর প্রিয় নবীর কাছে উপস্থিত হয়ে তার দ্বারে করাঘাত করেন । উমরের হাতে তরবারি ছিল বিধায় সাহাবিগণ তাকে প্রবেশের অনুমতি দিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। হামজা রা. বলেন, আসতে দাও। ভালো নিয়তে এসে থাকলে ভালো কথা, অন্যথায় তার তরবারি দিয়ে তার শিরশ্ছেদ করা হবে ।
উমর ভেতরে পা রাখা মাত্রই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এগিয়ে এসে তার জামা ধরে বলেন, উমর কেন এসেছ? তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ঈমান আনার জন্য এসেছি। নবীজির জবান থেকে তখন এমনিতেই এমন সজোরে তাকবির ধ্বনি বের হয়, যা গোটা পাহাড় কাঁপিয়ে তোলে।
উমর রা. ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। তখন চল্লিশ বা তারও বেশি লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করত। প্রকাশ্যে নিজের ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা তো দূরের কথা, নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করা বিপজ্জনক ছিল। কাবায় নামাজ পড়া অসম্ভব ছিল। কিন্তু ফারুক আজম ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর চিত্র পাল্টে যায়। তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। শুধু তাই নয়; বরং তিনি মুশরিকদের একত্র করে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দেন যে, তারা যেন ঈমান আনে।
এতে মুশরিকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। কিন্তু তার মামা আস ইবনে ওয়ায়েল তাকে তার সুরক্ষায় নিয়ে যান। উমর রা. ইসলাম গ্রহণের আগে মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার করুণ চিত্র নিজের চোখে দেখেছিলেন। তাই, সমতা বজায় রাখার জন্য, তিনি আস ইবনে ওয়ায়েলের অধীনে ইসলাম গ্রহণের পর নিরাপদে বসবাস করতে পছন্দ করেননি। তিনি তার নিরাপত্তা অগ্রাহ্য করে অত্যন্ত সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে মুশরিকদের সাথে মোকাবেলা চালিয়ে যান। এমনকি তিনি একদল মুসলমানের সাথে কাবা শরীফে গিয়ে নামাজ আদায় করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো হক, বাতিলের মুখোমুখি দাঁড়ায়। এর বিনিময়ে আল্লাহর রাসুল সা. তাকে ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন।
স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি:
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. একাধিক বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীদের বিবরণ নিচে পেশ করা হলো,
১. জয়নাব রা. । উসমান ইবনে মাজউন রা.-এর দুধ বোন। মুসলমান হয়ে মক্কাতেই ইন্তেকাল করেন।
২. কুরাইবা বিনতে আবু উমাইয়া আল মাখজুমি। ইসলাম গ্রহণ না করায় উমর ইবনুল খাত্তাব তাকে তালাক দিয়ে দেন।
৩. মুলাইকা বিনতে হারওয়াল । মুশরিক হওয়ায় তাকেও তালাক দেন।
৪. আতেকা বিনতে জায়েদ রা.। প্রথমে তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা.-এর স্ত্রী। পরবর্তীকালে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তাকে বিয়ে করেন।
৫. উম্মে কুলসুম রা., রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতনি। ফাতেমা রা.-এর সন্তান। নবীজির বংশের সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য ১৭ হিজরিতে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ৪০ হাজার মহরের মাধ্যমে তাকে বিয়ে করেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে হাফসা রা. প্রিয় নবীর পবিত্র স্ত্রীদের একজন ছিলেন। তার নামেই উমর ইবনুল খাত্তাব আপন উপনাম গ্রহণ করেছিলেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর সন্তানদের নাম:
১. আবদুল্লাহ ইবনে উমর ২. আসেম ৩. আবু শাহমা ৪. আবদুর রহমান ৫. জায়েদ ৬. মুজির।
এদের মধ্যে আবদুল্লাহ, উবাইদুল্লাহ ও আসেম তাদের জ্ঞান, গুণ এবং অন্যান্য যোগ্যতার কারণে অত্যন্ত প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর মদিনায় হিজরত:
মক্কায় মুসলমানদের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছিল, মুশরিকদের হিংসা ও শত্রুতাও ততই বেড়ে চলছিল। প্রথমদিকে তারা শুধু স্বভাবজাত হিংস্রতা ও ধর্মীয় উন্মাদনায় মুসলমানদের নির্যাতন করছিল। কিন্তু এ পর্যায়ে রাজনৈতিক বিবেচনা তাদেরকে মুসলমানদের নির্মূল করতে উদ্দীপ্ত করে। ইসলাম ধর্মে ধৈর্য্য ও প্রতিকূলতার মোকাবেলায় অবিচল থাকার উপাদান না থাকতো, তাহলে মুসলমানদের পক্ষে তাদের ধর্মে অবিচল থাকা অসম্ভব হয়ে যেত।
মুসলমানগণ মদিনায় হিজরতের অনুমতিপ্রাপ্ত হলে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-ও হিজরতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রথমে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তিনি মুশরিকদের সমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করে কাবা শরিফে পৌঁছেন। সেখানে প্রশান্তচিত্তে তাওয়াফ করেন। এরপর নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুশরিকদের লক্ষ্য করে বলেন, যে আমার মোকাবেলা করতে চায় সে যেন মক্কার বাইরে এসে মোকাবেলা করে। কিন্তু কেউই এই দুঃসাহস দেখায়নি। এভাবেই তিনি তখন মদিনায় চলে যান।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মদিনায় পৌঁছে কুবা নামক স্থানে রিফাআ ইবনে আবদুল মুনজিরের ঘরে মেহমান হন। কুবার অপর নাম হলো: আওয়ালি । উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর পর অধিকাংশ সাহাবি হিজরত শুরু করেন। একপর্যায়ে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে খোদ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় গিয়ে উপস্থিত হন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে মদিনায় মুহাজিরদেরকে আনসারদের সঙ্গে তাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে গড়ে দেন। তখন আনসারগণ ইতিহাসের নজিরবিহীন সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তারা মুহাজিরদেরকে নিজেদের ধনসম্পদের অংশীদার বানিয়ে নেন। বন্ধুত্ব স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের মর্যাদা ও অবস্থানের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়। অর্থাৎ যে মুহাজির যে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তাকে সে মর্যাদাসম্পন্ন আনসারের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করা হয় । সে হিসেবে বনু সালেম গোত্রের সম্মানিত নেতা উতবা ইবনে মালেকের সঙ্গে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ে দেওয়া হয়।
ইসলামে আজানের প্রচলন:
মদিনায় নামাজের সময় ঘোষণার জন্য কিছু উপায় নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে নবীজী সা. পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কতিপয় সাহাবী আগুন জ্বালিয়ে মানুষকে আহ্বান জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিলেন। কেউ কেউ ঘণ্টা বাজানোর বাজানোর পরামর্শ দেন, যেমন ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বাজায়। উমর বিন আল-খাত্তাব রা. বললেন: একজন মানুষকে নামাজের ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। মহানবী সা. তাঁর মতামত শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপর বিলাল রা. নামাযের আযানের নির্দেশ কে দেন? এভাবে উমর রা.-এর সিদ্ধান্তে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে একত্ববাদের আওয়াজ ও বাণী কিয়ামত পর্যন্ত সারা বিশ্বে দিনে-রাতে পাঁচবার ধ্বনিত হতে থাকবে।
যুদ্ধ এবং অন্যান্য অবস্থা:
মদিনায় সর্বপ্রথম বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মত প্রদান, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বীরত্ব ও দৃঢ়তা— সর্বক্ষেত্রেই উমর ইবনুল খাত্তাব রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে ছিলেন। বদরের ময়দানে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। প্রতিপক্ষের প্রায় ৭০ জন নিহত হয় এবং প্রায় সমসংখ্যক মানুষ বন্দি হয়। যেহেতু বন্দিদের মধ্যে কুরাইশদের বড় বড় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছিলেন, তাই প্রশ্ন দাঁড়ায় তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা যায়?
রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাহাবীদের জীবনী জানতে প্রায় শতাধিক সাহাবী রা.-এর জীবনী সম্বলিত সাহাবী বিভাগে ভিজিট করুন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল সাহাবির মত জানতে চান। বিভিন্নজন বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেন। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, এদের সবাইকে হত্যা করা হোক। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের সবাই নিজ নিজ নিকটাত্মীয়কে হত্যা করুক। আলি আকিলের গর্দান উড়িয়ে দিক। অমুক অমুককে হত্যা করুক। আমি আমার নিকটাত্মীয়ের কাজ সম্পাদন করব। এই সিদ্ধান্তটি আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের অনুগামী ছিল না। আয়াত অবতীর্ণ হলো,
مَا كَانَ لِنَبِيَّ أَن يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُلْخِنَ فِي الْأَرْضِ
“নবীর কাছে কোনো বন্দি থাকা উচিত নয়, যতক্ষণ না তিনি তাদের রক্ত প্রবাহিত করেন।”
এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর সিদ্দিক রা. খুব কেঁদেছিলেন । বদর যুদ্ধের পর মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে লড়াই সংঘটিত হয়। তাদের মদিনা থেকে বিতাড়ন করা হয়। সাবিকসহ আরও কটি ছোটো খাটো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সর্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
একপর্যায়ে হিজরি তৃতীয় সনের শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে কাফেরদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। যাদের মধ্যে অশ্বারোহী ছিল ২০০ এবং ৭০০ ছিল বর্মধারী। পক্ষান্তরে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০০। মাত্র দুইজন ছিলেন অশ্বারোহী। শাওয়াল মাসের ৭ তারিখ শনিবার লড়াই শুরু হয় । যাতে কাফেররা পেছন থেকে আক্রমণ করতে না পারে, রসূলুল্লাহ সা. আবদুল্লাহ বিন আল-জুবায়ের রা. সহ পঞ্চাশজন তীরন্দাজ সহ মোতায়েন করলেন।
মুসলমানগণ প্রতিপক্ষের ব্যূহ বিপর্যস্ত করে ফেলেন। কাফেররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়, আর মুসলিম মুজাহিদগণ গনিমতের সম্পদ একত্রিত করা শুরু করেন। তিরন্দাজগণ মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। তাই তারাও গনিমতের সম্পদ জড়ো করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে তিরন্দাজ প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা. এবং অল্প কয়েকজন সাথি আপন অবস্থায় থেকে যান। তিরন্দাজদের অনেকাংশ নিজেদের স্থান থেকে সরে যেতেই খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি) অকস্মাৎ পেছন থেকে তীব্রগতিতে আক্রমণ চালিয়ে বসেন ।
মুসলমানগণ ছিলেন সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। তাই তারা এই আকস্মিক হামলা প্রতিহত করতে পারেননি। ফলে কাফেররা খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আক্রমণ করে বসে। তারা বৃষ্টির মতো তীর ও পাথর ছুড়তে থাকে। এতে নবীর দাঁত শহীদ হয়ে যায়। কপালে আঘাত লাগে। শিরস্ত্রাণের কড়া ভেতরে ঢুকে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গর্তে পড়ে যান এবং লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে যান।
যুদ্ধের তীব্রতা কিছুটা কমে এলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩০ জন আত্মোৎসর্গকারী সাথির সঙ্গে পাহাড়ে চলে যান। এই সময় একদল সৈন্য নিয়ে খালেদ ইবনে ওয়ালিদকে এদিকে আসতে দেখে নবীজি বলেন, হে আল্লাহ! তারা যেন এখানে আসতে না পারে। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তখন কতিপয় মুহাজির ও আনসারকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যান। আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে পেছনে হটিয়ে দেন।
রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাহাবীদের জীবনী জানতে প্রায় শতাধিক সাহাবী রা.-এর জীবনী সম্বলিত সাহাবী বিভাগে ভিজিট করুন।
কুরাইশ সর্দার আবু সুফিয়ান তখন গিরি ঘাঁটির কাছে এসে চিৎকার করে বলে, এখানে কি মুহাম্মাদ আছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উত্তর না দেওয়ার নির্দেশ দেন। আবু সুফিয়ান এরপর উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ও আবু বকর রা.-এর নাম নিয়ে বলে, তারা কি এখানে রয়েছে? সে কোনো উত্তর না পেয়ে বলে, নিঃসন্দেহে তারা মারা পড়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তখন আর ধৈর্যধারণ করতে পারেননি। তিনি চিৎকার করে বলেন, “হে আল্লাহর দুশমন! আমরা সবাই জীবিত আছি।’ আবু সুফিয়ান তখন বলে, হুবালের জয় হোক !(হুবাল কুরাইশের দেবতার নাম।)
মুহাম্মদ কি এখানে আছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কেরামকে তার উত্তর না দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এবং আবু সুফিয়ান, তারপর উমর বিন খাত্তাব রা., আবু বকর নাম ধরে বললেনঃ তারা কি এখানে? সে কোন উত্তর পায় না এবং বলল: তারা মারা গেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। উমর বিন খাত্তাব আর ধৈর্য ধরতে না পেরে চিৎকার করে বললেন: হে আল্লাহর শত্রু! আমরা সবাই বেঁচে আছি। আবু সুফিয়ান বলেছেন: বিজয় হুবালের। (হুবাল কুরাইশদের দেবতার নাম)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-কে বলেন, তুমি উত্তর দাও। উমর রা. বলেন:
الله أعلى وأجل
‘আল্লাহ তায়ালা মহান এবং তার মর্যাদা সর্বোচ্চ।’
উহুদ যুদ্ধের পর তৃতীয় হিজরিতে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর ভাগ্যে এই সৌভাগ্য অর্জিত হয় যে, তার কন্যা হাফসা রা.-কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নেন।
হিজরীর ষষ্ঠ তারিখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কাবা পরিদর্শনের ইচ্ছা পোষণ করেন। নবী সা. অস্ত্র বহন করতে নিষেধ করেছেন যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগ না আসে। জুলহুলাইফার আগমনের পর উমর ইবনুল খাত্তাব দেখলেন যে, শত্রুদের মধ্যে অস্ত্রহীনভাবে চলা সমীচীন নয়। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মত আমলে নিয়ে মদিনা থেকে কিছু অস্ত্র আনিয়ে নেন ।
কুরাইশরা এ বছর নবীজিকে মক্কায় প্রবেশ করতে না দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল। অনেক দেন দরবার শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। সে চুক্তির একটি শর্ত ছিল, কুরাইশের কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে গেলে তাদেরকে কুরাইশদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কোনো মুসলমান কুরাইশদের হাতে চলে এলে কুরাইশরা তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকবে না।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর আত্মমর্যাদাবান মেজাজ বাহ্যত নতশির এই শর্তের ফলে অস্থির হয়ে ওঠে। তিনি প্রিয় নবীর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলেন, যদি আমরা যখন হকের উপর আছি, তখন এতটা নিচু হয়ে বাতিলের সঙ্গে সন্ধি করব কেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আল্লাহর নবী । আমি আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কিছু করি না । তারপর আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর সঙ্গেও তিনি একই প্রশ্ন উত্থাপন করেন। আর বকর রা.-ও একই জবাব দেন। পরে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তার অনুরূপ কথাবার্তার কারণে অনুতপ্ত হন এবং কাফফারাস্বরূপ কিছু দানখয়রাত করেন।
সন্ধির অঙ্গীকারনামা লিপিবদ্ধ হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-ও তাতে স্বাক্ষর করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ফিরে চলেন। পথে অবতীর্ণ হয়,
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِينًا
‘আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-কে ডেকে আয়াতটি শুনিয়ে বলেন, ‘আজ আমার উপর এমন এক সুরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার কাছে দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে অধিকতর প্রিয়।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর উমর ইবনুল খাত্তাব রা. উত্তেজিত হয়ে মসজিদে নববিতে ঘোষণা করেছিলেন, যে ব্যক্তি বলবে নবীজির মৃত্যু হয়েছে, তার ঘাড় উড়িয়ে ফেলা হবে। সম্ভবত মুনাফিকদের ফেতনা বন্ধ করার জন্য তিনি এমনটা বলেছিলেন। উমর রা.-এর পরামর্শ এবং তার পীড়াপীড়ির ফলেই তখন কুরআনুল কারিম সংকলিত হয়েছিল। যা বিভিন্ন স্থানে ঠড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
আবু বকর রা. তার শাসনকালে ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন— খেলাফতের দায়িত্ব আদায়ের জন্য উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ছাড়া উপযুক্ত কেউ হতে পারে না।
তাই ইন্তেকালের আগে তিনি শীর্ষ সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্ধারণ করে যান। অতঃপর তাকে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত প্রদান করেন। যা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রমাণিত হয়।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর শাহাদাত:
মুগিরা ইবনে শুবা রা.-এর এক পারসিক গোলাম ছিল। তার নাম হলো ফিরোজ । উপনাম ছিল আবু লুলু । সে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর কাছে তার মনিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসে যে, তার মনিব তার থেকে মোটা অঙ্কের কর উসুল করে থাকে । অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন। তাই উমর রা. তার অভিযোগের কোনো পাত্তা দেননি।
ফলে সে ভীষণ ক্ষেপে যায় এবং ফজরের নামাজ আদায়কালে সে একটি বর্শা দ্বারা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর উপর পরপর ছয়টি আঘাত হানে। আঘাতের ফলে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি আর নামাজ পড়াতে পারেননি। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. তার স্থলে নামাজ পড়ান।
আঘাত ছিল ঘোরতর। লোকজন পরবর্তী খলিফা নির্ধারণের জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকলে তিনি এ লক্ষ্যে ছয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলেন, এদের মধ্যে যার খেলাফতের উপর বাকি পাঁচজন একমত হবেন তাকেই পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্বাচন করা হবে।
ছয়জন হলেন:
উসমান রা., আলি রা., জুবায়ের রা., তালহা রা., সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা., আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা.।
তিনি তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে সমাহিত হওয়ার জন্য আয়েশা রা. থেকে অনুমতি নিয়ে নেন।
এরপর তিনি মুহাজির, আনসার, বেদুইন ও জিম্মিদের অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। ছেলে আবদুল্লাহ রা.-কে অসিয়ত করেন,
“আমার যে ঋণ রয়েছে তা যদি রেখে যাওয়া সম্পদ দ্বারা আদায় হয়ে যা তাহলে তো ভালো, অন্যথায় বনু আদির কাছে আবেদন করবে। তাদের দ্বারাও সম্ভব না হলে পুরো কুরাইশকে বলবে। তবে কুরাইশ ছাড়া অন্য কাউকে কষ্ট দেবে না। এভাবে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওসিয়ত করার পর তিন দিন অসুস্থ থেকে মুহাররম মাসের এক তারিখ শনিবার ২৪ হিজরিতে ইসলামের এই মহান খাদেম আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হন।”
আপন প্রিয়তম বন্ধু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে চির সুখের নিদ্রায় যান।