আবু বকর সিদ্দিক রা. খেলাফতের আসনে সমাসীন হতেই পাহাড়সম বিপদাপদ ও শঙ্কা দেখতে পান। একদিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদাররা, অপরদিকে মুরতাদ হওয়ার ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উছে।। আরেকদল জাকাত প্রদান অস্বীকার করে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবদ্দশায় উসামা রা. কে শামে আক্রমণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আবু বকর রা. এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করলে তারা উসামার বাহিনী প্রেরণের বিষয়টি মুলতবি রেখে প্রথমে মুরতাদ এবং মিথ্যা নবুওয়াত দাবিদারদের দমনের পরামর্শ দেন। কিন্তু আবু বকর রা. নবীজির ইচ্ছা মুলতবি রাখতে রাজি হননি। যেই বাহিনীকে রোমানদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেই বাহিনীকে অন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রেরণ করতে চাচ্ছিলেন না। তাই দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আল্লাহর শপথ! মদিনা যদি সম্পূর্ণ মানবশূন্য হয়ে যায় যে, হিংস্র প্রাণীরা আমার পা খামচে ধরে, তথাপি আমি এই যুদ্ধ মুলতবি করতে পারব না।”
উসামা ইবনে জায়েদ রা.-এর অভিযান:
মোটকথা, বিপদের ঘনঘটা সত্ত্বেও আবু বকর রা. উসামা রা.-কে অভিযানে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তিনি বেশ কিছুদূর পায়ে হেঁটে তার সঙ্গ দেন এবং তাকে মূল্যবান উপদেশ দেন। যেমনটি তিনি সৈন্য বাহিনী প্রেরণের সময় করতেন। উসামা রা. ছিলেন ঘোড়ায় উপর, আর আবু বকর রা. হেঁটে হেঁটে সঙ্গে যাচ্ছিলেন। উসামা রা. আদবের খাতিরে তাকে লক্ষ্য করে বলেন: “আল্লাহর রাসুলের খলিফা! কসম আল্লাহর! হয় আপনি ঘোড়ায় আরোহণ করুন, নয়তো আমি ঘোড়া থেকে নেমে যাই।” আবু বকর রা. বলেন: এতে কী সমস্যা! আমি যদি সামান্য সময়ের জন্য আল্লাহর রাস্তায় আমার পা ধূলিমলিন করতে পারি, তাহলে তো আমার সৌভাগ্য। মুজাহিদদের প্রতি কদমে সাতশ নেকি লেখা হয়।
উসামা রা.-এর বাহিনী মদিনা থেকে বের হয়ে শাম সীমান্তে ঢুকে পড়েন এবং বিজয় অর্জন করে চল্লিশ দিন পর মদিনায় ফিরে আসেন। আবু বকর রা. তখন সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে বেরিয়ে আনন্দের সঙ্গে তাদের অভ্যর্থনা জানান ।
কুরআন সংকলন ও বিন্যস্তকরণ:
নবুওয়াত দাবিদার ও মুরতাদ বিরোধী যুদ্ধে বহু হাফেজ সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন। বিশেষত, ইয়ামামার যুদ্ধে এত অধিক সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম শহীদ হন, যার ফলে উমর রা.-এর মনে আশঙ্কা জাগে; যুদ সাহাবিদের শাহাদতের এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে একসময় কুরআনের বিশাল অংশ হারিয়ে যাবে। তাই তিনি সিদ্দিক রা.-কে কুরআন সংকলনের পরামর্শ দেন। কিন্তু আবু বকর রা. প্রথমদিকে এই ওজর পেশ করছিলেন — নবীজি যে কাজ করেননি, সেটি তিনি কীভাবে করবেন। উমর রা. বলছিলেন, এটা তো ভালো কাজ।
একসময় আবু বকর রা.-এর কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। সুতরাং তিনি কাতিবুল ওহী জায়েদ ইবনে সাবেত রা.-কে কুরআন সংকলনের নির্দেশ দেন। প্রথমে তিনিও এ কাজে দ্বিধা করছিলেন; কিন্তু পরে এর কল্যাণ বুঝতে পারেন। জায়েদ রা. অত্যন্ত সতর্কতা ও সীমাহীন প্রচেষ্টার মাধ্যমে সকল বিক্ষিপ্ত অংশ একত্রিত করে কিতাব আকারে তা লিপিবদ্ধ করেন।
একটি ভ্রান্তি নিরসন:
কুরআন সংকলন ও বিন্যস্তকরণের ব্যাপারে একটি ভুল বুঝাবুঝি হলো— রাসুল সা.-এর কুরআন আয়াত ও সুরা পরম্পরায় বিন্যস্ত ছিল না। তখন কোনো সুরার নামও রাখা হয়নি। এই কারণেই আবু বকর রা.-এর যুগে এ সকল আয়াত ও সুরাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে বিন্যস্ত করেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, যেভাবে কুরআনের প্রতিটি আয়াত ওহির মাধ্যমে অবতীর্ণ, সেভাবে আয়াত এবং সুরাগুলোর পরস্পর বিন্যাস, ধারাবাহিকতা ও নামকরণ সবগুলোই ওহির মাধ্যমে নির্ধারিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশাতেই এ কাজ পূর্ণতা পেয়েছিল। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি থাকায় আমরা কিছুটা বিস্তারিতভাবে তা আলোচনা করব।
কুরআনের আয়াতগুলো নবী যুগেই ধারাবাহিকভাবে সংকলিত
কুরআনের আয়াতগুলো সাধারণত বিশেষ কোনো ঘটনা বা প্রয়োজন বা হুকুম-আহকামের প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হতো। অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবিগণ সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতেন। সংরক্ষণ করতেন খেজুরের ডাল, হাড়, চামড়া, পাথরের স্লেট কিংবা বিশেষ ধরনের কাগজে। এরপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো বিন্যস্ত করতেন। কোনো সুরা শেষ হয়ে গেলে তার একটি নাম দেওয়া হতো। এরপর শুরু হতো অন্য সুরা। কখনও একসঙ্গে দুটি সুরা অবতীর্ণ হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পৃথকভাবে তা লিপিবদ্ধ করাতেন। এভাবে রাসুলের জীবদ্দশায়ই কুরআনুল কারীমের সকল সুরা নামসহ বিন্যস্ত হয় ।
হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে অমুক সুরা পড়েছেন অথবা অমুক সুরা পর্যন্ত তেলাওয়াত করেছেন।
সহীহ বুখারীতে উল্লেখ আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পাঠ করেছেন । সুরা ফাতেহা ও সুরা ইখলাসের কথা তো ব্যাপকভাবে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সুরার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো কুরআন রাসুল সা.-এর যুগে ধারাবাহিকভাবে সংকলিত হওয়ার অন্যতম দলিল।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারিতে লেখেন, কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: يَتْلُو صُحُفًا مُّطَهَّرَةً “পাঠ করেন পবিত্র সহিফা”।
এই আয়াতে বলা হয়েছে বিভিন্ন সহিফায় সংকলিত রয়েছে। অবশ্যই কুরআন বিভিন্ন সহিফায় লিপিবদ্ধ ছিল, তবে সেটা ছিল বিক্ষিপ্ত আকারে। আবু বকর রা. এগুলোকে এক জায়গায় একত্রিত করেন। সংকলনটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পরবর্তীকালে উসমান রা. স্বীয় শাসনামলে এর কয়েকটি কপি তৈরি করে সেগুলোকে বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেন।
কতদিন পর্যন্ত সিদ্দিক রা.-এর এই সহিফা সংরক্ষিত ছিল
জায়েদ ইবনে সাবেত রা.-এর সংকলনটি আবু বকর রা.-এর কাছে সংরক্ষিত থাকে। তার ইন্তেকালের পর এটি উমর রা.-এর অধীনে চলে আসে। উমর রা. এটি উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা.-এর কাছে রেখে অন্য কাউকে না দেওয়ার ওসিয়ত করে যান। তবে যারা কুরআন সংকলন করতে চাইতেন কিংবা নিজের কাছে কপি শুদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিত, তারা এ মুসহাফের মাধ্যমে উপকৃত হতেন।
উসমান রা. তার শাসনামলে হাফসার থেকে এটি সাময়িক সময়ের জন্য নিয়ে এর কয়েকটি কপি তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু মূল মুসহাফটি হাফসা রা.-এর কাছে বিদ্যমান থাকে। মারওয়ান মদিনার শাসক নিযুক্ত হওয়ার পর হাফসা রা. থেকে মুসহাফটি নিতে চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান। আমৃত্যু এটা তার কাছেই থাকে।
আবু বকর রা.-এর যুগে ইসলামের বিজয়সমূহ:
ইসলামী হুকুমত তখন আরব উপদ্বীপের সীমান্ত পৃথিবীর দুটি শক্তিধর সাম্রাজ্যের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছিল। একদিকে শামে রোমানরা পতাকা উড্ডীন করছিল, অপরদিকে ইরাকে কায়ানী গোত্র ক্ষমতায় ছিল। এই উভয় সাম্রাজ্য সবসময় আরবের স্বাধীন লোকদের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
বিশেষত পারস্য সাম্রাজ্য এজন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করে। তারা কয়েক দফা বড় বড় বাহিনী প্রেরণ করে আরব ভূখণ্ড দখল করার জন্য। বিভিন্ন সময় তারা আরবের এক বিশাল অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নেয়। পারস্য সাম্রাজ্যের ইবনে আরদাশিরের যুগে হেজাজ ও ইয়ামান তাদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। কিন্তু আরবদের স্বাধীনচেতা মনোভাব ও আত্মমর্যাদাবোধ কখনও দমে থাকা শেখেনি। সুযোগ পেলেই তারা বিদ্রোহ করে বসত অনাচারীদের বিরুদ্ধে।
মোটকথা, আরব ও ইরানের সম্পর্ক খুব পুরোনো। নবীজির যুগ পর্যন্ত তাদের পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষের ধারা চলে আসছিল। এক সময় আরব ও ইরানীদের মধ্যে যি-কার নামক এক বিশাল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে ইরানিরা পরাজিত হলে নবীজি বলেন: “এই প্রথম আরবরা অনারবদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারল।”
রোম সাম্রাজ্যের সঙ্গেও আরবদের পুরোনো সম্পর্ক ছিল। সালিহ, গাসসান, জুজামসহ আরবের বহু গোত্র শামের সীমান্ত এলাকায় নিবাস গড়ে তুলে। তারা ধীরে ধীরে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে শামে বড় বড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে নেয়। ধর্মীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে রোমানদের সঙ্গে তাদের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইসলাম আবির্ভাবের পর আরবের মুশরিকদের মতো শামের খ্রিস্টানরাও ইসলাম-বিরোধিতায় মেতে ওঠে। ষষ্ঠ হিজরিতে দিহইয়াতুল কালবি রা. রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ফিরে আসার সময় শামের ঐ খ্রিষ্টানরা তার মাল-সামানা লুটে নেয়।
একইভাবে নবীজির দূত হারেস ইবনে উমায়ের রা. কে বসরার শাসক শুরাহবিল ইবনে আমর হত্যা করে ফেলে। অষ্টম হিজরিতে সংঘটিত মুতার যুদ্ধ ছিল এরই প্রতিশোধ প্রচেষ্টা। এতে শীর্ষ সাহাবিগণ অংশগ্রহণ করেন।
নবম হিজরিতে রোমানরা মদিনার উপর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিতে থাকে। সংবাদ পেয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে অগ্রসর হয়ে তাবুকে পৌঁছুলে তাদের মনোবল ভেঙে যায়। ফলে যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও মুসলমানদের উপর শামের আরব ও রোমানদের থেকে সব সময়ই একধরনের শঙ্কা বিদ্যমান ছিল।
উল্লিখিত ঘটনাগুলো বর্ণনার উদ্দেশ্য একথা ফুটিয়ে তোলা, আরবরা প্রতিবেশী দুই সাম্রাজ্যের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ছিল। বিশেষ করে ইসলামের অব্যাহত উন্নতি তাদের আরও শঙ্কায় ফেলে দেয়। যা শৈশবকাল অতিক্রম করা মুসলিম সাম্রাজ্যের জন্য বিপজ্জনক ছিল। তাই সিদ্দিকে আকবার রা. অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সমাধানের পর বহি র্শত্রুদের মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন।
ইরাক যুদ্ধ:
তখন ইরানি সাম্রাজ্য বিভিন্ন বিপ্লব ও গৃহযুদ্ধের ফলে আগের শৌর্যবীর্য হারিয়ে ফেলে। তখন ক্ষমতায় ছিল নাবালক শাহানশাহ ইয়াজদাগিরদ। তার পক্ষে বুরান দুখত নামক এক নারী রাষ্ট্রপরিচালনা করছিল। এই সুযোগে তাদের টার্গেটে থাকা ইরাকের আরব গোত্রগুলো ফায়দা লুটতে প্রয়াসী হয়। সুযোগ পেয়ে তারা কার্যক্রম শুরু করে দেয়। ওয়ায়েল গোত্রের দুই সর্দার মুসান্না শায়বানি ও সুআইদ আজালি হাররা ও আহলা অঞ্চলে ধ্বংসলীলা শুরু করে দেয়।
মুসান্না ছিলেন মুসলমান। তিনি লক্ষ্য করেন, তার একার পক্ষে এ বিশাল সাম্রাজ্যের সঙ্গে টক্কর দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি খেলাফতের দরবারে উপস্থিত হয়ে নিয়মতান্ত্রিক অভিযান পরিচালনার অনুমতি প্রার্থনা করেন। অনুমতি পেয়ে তিনি সকল গোত্রকে সঙ্গে নিয়ে পারস্য সীমান্তে ঢুকে পড়েন। ততদিনে খালেদ ইবনে ওয়ালিদ মিথ্যা নবুওয়াত দাবিদার ও মুরতাদদের দমন করে নিয়েছিলেন। তাই আবু বকর রা. তাকে একটি সেনাদল দিয়ে মুসান্নার সাহায্যে পাঠিয়ে দেন।
খালেদ রা. পৌছামাত্রই যুদ্ধের পট পালটে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন বাঙ্কা, কিসকার প্রভৃতি অঞ্চল জয় করে ইরানের সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এখানে বাদশাহ জাবানের সঙ্গে মোকাবেলা হয়। যুদ্ধে বাদশাহ পরাজয়বরণ করে। এরপর হিরার বাদশাহ নোমানের সঙ্গে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
নোমান পরাজিত হয়ে মাদায়েনে পালিয়ে যায়। খালেদ রা. খোরলাক পৌঁছেন। খোরলাকবাসীরা কল্যাণের চিন্তা করে ৭০ হাজার বা ১ লক্ষ দিরহামের করের বিনিময়ে সন্ধি করে নেয়। মোটকথা, এভাবে গোটা হিরা অঞ্চল মুসলমানদের আয়ত্তে চলে আসে।
শাম অভিযান:
খলিফা আবু বকর রা. সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে হিজরি ১৩ সনে শামে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযান শুরু করেন। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য পৃথক পৃথক সেনাদল নির্ধারণ করেন।
আবু উবায়দা রা.-কে হিমসে, ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে দামেশকে, শুরাহবিল ইবনে হাসানা রা.-কে জর্দানে ও আমর ইবনে আস রা.-কে ফিলিস্তিনে পাঠান।
মুজাহিদদের মোট সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার। রোম সম্রাটও আলাদা আলাদা বাহিনী তৈরি করে রেখেছিল। অবস্থা লক্ষ্য করে মুসলিম সেনাপতিগণ সকল সৈন্যদের এক জায়গায় একত্রিত করেন।
প্রতিপক্ষের সৈন্যসংখ্যার আধিক্যের কথা জানিয়ে খেলাফতের দরবারে সাহায্যের আবেদন জানান। তখন দারুল খেলাফতে অবশিষ্ট সৈন্য বিদ্যমান না থাকায় আবু বকর রা. অত্যন্ত বিচলিত হন। তিনি তখন পারস্যে লড়াইরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা.-কে লিখে পাঠান—
ইরাকী রণক্ষেত্রের দায়িত্ব মুসান্নার হাতে অর্পণ করে দ্রুত শামে রওনা হয়ে যাও।
নির্দেশ পৌঁছা মাত্রই খালেদ রা. এক বাহিনী সঙ্গে নিয়ে শামের রণক্ষেত্র অভিমুখে ধেয়ে যান। খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা.-কে রাস্তায় ছোটোখাটো বেশ কয়েকটি বৈরী পরিস্থিতির মুকাবেলা করেন। তিনি হিরা থেকে রওনা হয়ে আইনুত তামারে পৌঁছলে সেখানে পারস্যবাহিনী তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। বাহিনীর সেনাপতি ছিল উকবা ইবনে আবু হিলাল। খালেদ রা. তাদেরকে পরাজিত করে সামনে অগ্রসর হন।
এরপর তিনি সেখান থেকে আম্বার নামক স্থানে পৌঁছান। আম্বার থেকে মরুভূমি অতিক্রম করে তাদমিরে তাঁবু গাড়েন। তাদমিরবাসীরা প্রথমে কেল্লাবন্দি হয়ে প্রতিরোধ চালায়। এরপর বাধ্য হয়ে সন্ধি করে নেয়। তাদমির অতিক্রম করে তারা হুরানে এসে উপনীত হন। এখানেও তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
খালেদ রা. জয় লাভ করে শামের ইসলামি বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হন। মুসলমানদের সম্মিলিত শক্তি মিলে বুসরা, ফিহিল ও আজনাদাইনকে নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয়। আজনাদাইনে এক প্রলয়ংকরী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে বহু মুসলমান শহিদ হন। অবশেষে মুসলমানদের বিজয় হয়।
রাসুলুল্লাহ সা.-এর সাহাবীদের জীবনী জানতে প্রায় শতাধিক সাহাবী রা.-এর জীবনী সম্বলিত সাহাবী বিভাগে ভিজিট করুন।
আজনাদাইন থেকে অগ্রসর হয়ে মুসলিম বাহিনী দামেশক অবরোধ করেন। কিন্তু দামেশক বিজয় হওয়ার আগেই আবু বকর সিদ্দিক রা. আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান।